
দেশি মাছের জাত
দেশি মাছের জাত সংরক্ষণ করে কীভাবে সেগুলো বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করে উৎপাদন বাড়ানো যায়—সেই উপায় আবিষ্কার করেছেন।
এসব গবেষণাকাজে সাফল্য আসায়—গত ১০ বছরে দেশি ছোট মাছের উৎপাদন প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেড়ে গেছে। ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে—এসব মাছের জাত উন্নয়ন এবং আরো কয়েক প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছেন মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এইচ এম কোহিনূর জানান, বিলুপ্তপ্রায় জাতগুলো বাছাই করে গবেষণা করা হচ্ছে। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সেই জাতগুলোর পোনা উৎপাদনে সাফল্য এসেছে এবং চাষাবাদের মাধ্যমেও সুফল পাওয়া গেছে।
এই ধারাবাহিকতায় ময়মনসিংহে প্রধান কার্যালয় ছাড়াও—বগুড়ার সান্তাহার, নীলফামারীর সৈয়দপুর ও যশোর উপকেন্দ্রে বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণে কাজ চলছে।
আইইউসিএন—ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে মিঠাপানির ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৬৪ প্রজাতির মাছ বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় এবং এই ২৬০ প্রজাতির মধ্যে ১৪৩ প্রজাতিই ছোট মাছ।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে পাবদা, গুলশা, গুজি আইড়, রাজপুঁটি, চিতল, মেনি, ট্যাংরা, ফলি, বালাচাটা, শিং, মহাশোল, গুতুম, মাগুর, বৈড়ালি, কুঁচিয়া, ভাগনা, খলিশা, কালবাউশ, কই, বাটা, গজার, সরপুঁটি ও গনিয়া—এই ২৩ প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
ফলে বিলুপ্তপ্রায় এসব মাছ সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে এবং দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে।
প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সেলিনা ইয়াসমিন বলেন, উন্মুক্ত জলাশয় থেকে যে মাছগুলো বিলুপ্ত হতে চলেছে, সেই মাছগুলোর সংরক্ষণ করে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করে পুকুরে কিংবা আবদ্ধ জলাশয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়—ঢেলা, শোল, বাইম, রানি, কাজলি, বাতাসি, কাকিলা, কাওন ও ভোল মাছের প্রজনন এবং চাষপদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চলছে। সম্প্রতি ময়মনসিংহের শহরের কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অন্যান্য মাছের সঙ্গে দেশি নানা রকমের মাছ বিক্রি হচ্ছে। মাছ কিনতে আসা ক্রেতারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলেন, বেশ কয়েক বছর আগেও দেশি মাছগুলো বাজারে সচরাচর পাওয়া যেত না। পাওয়া গেলেও, দাম ছিল নাগালের বাইরে।
Comments (0)